Sunday, 12 May 2013

শ্রেণীকক্ষের অভাবে খেলার মাঠে পাঠদান
শিক্ষা বান্ধব সরকারের আমলেও কুমিল্লার চান্দিনায় শ্রেণী কক্ষের সংকটে ভুগছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শ্রেণী কক্ষের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান । গ্রীষ্মের খরা রোদেই খোলা আকাশের নিচে বসে লেখাপড়া করতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিদ্যালয় সমূহের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নতুন ভবন চেয়ে ক্ষমতাসীন দলের উর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তি ও প্রাথমিক বিদ্যালয় অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার তবদীর করেও কোন আশার আলো দেখেননি। আবার অনেক বিদ্যালয়ের ভবন বরাদ্দের কথা বলে বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। উপজেলা সদর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চান্দিনা পৌরসভাধীন ছায়কোট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭০ সালে চান্দিনা-শ্রীমন্তপুর সড়কের পাশে প্রতিষ্ঠিত হয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। প্রায় তিন যুগ যাবৎ পাঁচটি শ্রেণী কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনসেট বিল্ডিং-এ চলছিল এই বিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্য। ১৯৯৫ সালে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা বিল্ডিং নির্মাণ হলে মোটামুটি ভালো ভাবেই চলছিল বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষের সংকট পূর্ণ করার জন্য ২০০৫ সালে ২ কক্ষ বিশিষ্ট পিডিপি-২ এর আওতাধীন নতুন ভবন বরাদ্দ আসে। কিন্তু কতিপয় স্বার্থান্বেসী বহল নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে তিন যুগ আগে অবস্থিত পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট ভবনটি ভেঙ্গে সেখানে সেখানে ওই ২ কক্ষ বিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণ করে। আর এতেই দিনের পর দিন বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষ সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠে। পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদ নতুন ভবন বরাদ্দের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট ধরনা দিতে থাকেন। আর উর্ধ্বতন ব্যক্তিগণ নতুন ভবন বরাদ্দ দেম-দিচ্ছি বলে ঘুড়াইতে থাকেন। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরও চলে জোর তদবীর। ক্ষমতার চার বছরে পূর্ণ হলেও ছায়কোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের সংকট কাটেনি। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ের ৫শ ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য রয়েছে মাত্র চারটি শ্রেণী কক্ষ। আর ৫৫ জোড়া বেঞ্চের মধ্যে ২০ জোড়া বেঞ্চেই ছাত্র-ছাত্রীদের বসার অনুপযোগী। নিরূপায় শিক্ষকরা শ্রেণী কক্ষ সংকট, বেঞ্চের অভাবে প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে খেলার মাঠে খোলা আকাশে নিচে প্লাষ্টিকের চটে বসিয়ে পাঠদান দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতো সংকটের পরও শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিদ্যালয়ের ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রেখেছে ছাত্র-ছাত্রীরা। বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, �এ সরকার শিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের সন্তানরা এভাবে খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে মাটিতে বসে লেখাপড়া করছে তা কি দেখার কেউ নেই�! বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিলকিছ আক্তার জানান, ভবন ও বেঞ্চ সংকটের বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ প্রদানের আশার আলো দেখিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা-তো শিক্ষক, আমাদের করার কি আছে? শ্রেণী কক্ষ সংকটের কারণে একটি টিনের ছাপড়া দিয়ে কোন রকমে চালিয়ে যাচ্ছিলাম। ওই ছাপড়াটিতেও অনেক সময় সাপের উৎপাতে শিক্ষার্থীরা বসতে পারতো না। কিন্তু এবার কালবৈশাখী ঝড়ে তাও দুমরে-মুচরে যাওয়ায় বসার অনুপযোগী হয়ে গেছে।


No comments:

Post a Comment